সিঁড়ি দিয়ে দোতলায় উঠতেই বাঁদিকে একটা ঘর আমাদের খেলার,
শুনলাম সেখান থেকে আসছে আওয়াজ আমার বোনেদের হল্লার;
‘দাদা, এদিকে আয়’, তুলি ডাকলো আমি ওদিকে তাকাতেই।
চারজনে ক্যারম খেলা ভালো হবে, যদি একটু যোগ দিস তুই।
নতুন খেলা শিখছে মোদের নতুন বৌদি;
জমবে খেলা, তুই ওর পার্টনার হ’স যদি।‘
নতুন ড্রেস সুভদ্রার - সুন্দর মানিয়েছে ওকে,
রূপ ওর আরও খুলেছে তুলির একটা ফ্রকে।
ফ্রকটার ঝুল হাঁটুর অনেকটা নীচে পর্য্যন্ত,
হাঁটু বের করা নয় মেমসাহেবদের মতো ।
বললাম, ‘তুমি তো ড্রেস বদলাচ্ছো ঘন ঘন,
রাত্তিরে কী প’রবে, এখনো কি কিছু জানো?’
‘দেখি, তুলি বা মিলির রাত্তিরে পরার জামা কি বাড়তি আছে।
নয়তো একটা সুতির সায়া-ব্লাউজ চেয়ে নেবো মার কাছে।‘
ভালোই ক্যারম খেললো সুভদ্রা নতুন শিখে;
ও আর আমি হারিয়ে দিলাম মিলি-তুলিকে ।
********
রাত্তিরে শোবার আগে আলগা সাজলো ও, মার দেওয়া সায়া আর ব্লাউজেই;
ব্লাউজটা ওর গায়ে ঢিলে; সামনে বোতাম – ফোরপ্লে করা যায় খুব সহজেই।
শুধোলুম ওকে ভালো ক’রে আদর ক’রতে ক’রতেই,
‘আজ তোমার বাবা-মার ঠিকানা আমাকে হবে নিতেই
নয়তো পুত্রত্ব থাকবে না; বাবা ধাক্কা দিয়ে ঘাড়ে,
আমাকে বাড়ী থেকে দেবে বার ক’রে একেবারে।‘
‘তাতো হ’তেই পারে, ছেলে যদি হয় বেআক্কেলে বেয়াড়া।
সবাই আমাকে খুব ভালবাসে শ্বশুর, শাশুড়ী, দেবরাণীরা।
অকাল কুষ্মাণ্ড ছেলেদের সব বাবা-মারাই দেন তাড়িয়ে,’
সুভদ্রা বললো, ‘আমি থাকবো এ বাড়ীতে গ্যাঁট হ’য়ে।‘
আমি বললাম, ‘ঐ আশায় থাকো, আমার সুভদ্রা প্রিয়তমা;
কুলগোত্রহীনা বনিতাকে সংসারে ঢোকাবেন না বাবা-মা;
বাধ্য হবো আমি তোমাকে নিয়ে তক্ষুনি বেরিয়ে যেতে
চেষ্টা ক’রবো তাড়াতাড়ি কোনো ভাড়াবাড়ী খুঁজে পেতে।‘
‘মনের সুখে যাবো তোমার সঙ্গে, ছেড়ে এবাড়ী, তাহ’লে,
নয়তো তুমিও আমাকে তাড়িয়ে দেবে সত্যিকথা বললে।
যাবো না ফিরে আমি কোনদিন আমার পুরোনো ডেরায়।
জহর খাইয়ে মারবে ওরা, রাখতে বংশের সম্মান বজায় ।
তোমরা যদি ঝাঁটা মেরে বিদেয় ক’রে দাও এ-বাড়ী থেকে,
বাড়ী-বাড়ী ক’রতে হবে রান্না-ঝাড়ু দেওয়ার কাজ আমাকে।…
লুটে আনার সময় একবারও জিগ্যেস ক’রেছিলে আমাকে
কী নাম আমার, কোথায় থাকি, বা আমার বাবা, মা কে?
যদি পছন্দ না হোতো তোমার, তখন সব প্রশ্নের উত্তর শুনে,
কিছু এসে যেতো না, ফেলে রেখে আসতে আমাকে ওখানে।
তেমনই থাকতাম ছিলাম আমি যেমন,
আরও অনেকদিন, হয়তো সারাজীবন।‘
‘কথা দিচ্ছি সুভদ্রা, দেবো না তোমাকে বাড়ী ছেড়ে যেতে;
আমিও বেরিয়ে যাবো, না হয় যদি তোমার জায়গা বাড়ীতে,
মোটামুটি কিছু আছে আমার মাসিক রোজগার,
বাড়ী ভাড়া দিয়ে চালাতে পারবো ছোট সংসার ।
এফিডেভিট ক’রে, জেনে রেখো সুনিশ্চয়,
গড়ে তুলবো তোমার একটা বংশপরিচয়।‘
‘তোমার আশ্বাস পেয়ে বলছি অর্জ্জুন।
এই শরীরে আমার মুসলমানের খুন ।
লুটে নেবার আগে সায়রা বানু ছিল আমার নাম।
এ-পর্য্যন্ত আমি এক মুসলিম মরদের বৌ ছিলাম।
চড়কের মেলা আমাদের বাড়ীর পাশেই,
তাই এসেছিলাম বোরখা আবায়া ছাড়াই,
তেলেভাজার লোভে বাড়ীর জামা প’রেই।
কল্পনাও ক’রিনি আমার মরদের উঠোন থেকে
কেউ গায়ের জোরে লুটে নিয়ে যাবে আমাকে -
মুখ-হাত-পা বেঁধে, সুযোগ না দিয়ে কথা বলার,
পৌরুষের গর্ব্ব করো, এতো নির্ম্মম বলাৎকার।‘
‘কথা দিলাম, দেবোনা হ’তে তোমার কোনো ক্ষতি;
তোমার এ স্বীকারোক্তিতে আমার মিনতি, অনুমতি।
মেয়েভোলানো ছল নয়, এ আমার হৃদয়ভরা প্রীতি;
নারী সায়রাকে পুরুষ অর্জ্জুনের একান্ত প্রতিশ্রুতি।
সত্য কথা বলবো মাকে, করবো না কিছু গোপন;
তোমার বাবার নাম ঠিকানার নাই আর প্রয়োজন।
সত্য বলার জন্য যদি হও বিতাড়িতা তুমি;
সঙ্গে যাবো; গৃহ, বংশ ত্যাগ ক’রবো আমি।‘
‘ধন্য আমি, লুটে এনে ক’রেছো আমায় মুক্ত;
বাঁচবো আমি নতুন ক’রে তোমার অনুরক্ত।'
এই কথা বলে আশ্রয় নিল সায়রা আমার বুকে,
অঝোরে কাঁদলো, বললো, ‘ভালবাসি তোমাকে।‘
উত্তরে আমি দুহাতে জড়িয়ে কাছে নিলুম ওকে,
বললুম, ‘তুমি আমার জীবনসঙ্গিনী লুটে আনা মাল নয়’,
প্রাণভ’রে চুমু খেলাম ওকে। একই প্রাণের পবিত্র প্রণয়।
মনে হোল, দুটি আলাদা প্রাণী নয় আমরা,
শুরু করা যাক একটু মজা কৌতুক ক’রা,
‘খুলে দিনু তব ব্লাউজের যত খুদি খুদি বোতাম,
তব সুগৌল স্তনযুগল সুবিন্যস্ত, সুন্দর, সুঠাম।
হে মুসলিম গৃহবধূ, করো অবারিত তব দ্বার –
গহীন অভ্যন্তরে তব, রাখিব প্রাণের উপহার।‘
সুভদ্রা একথার উত্তরে,
পিঠের নীচে দেবার তরে,
ছোট বালিশ খুঁজছিল আবার।
ব’ললাম ওকে, আমি
সুভদ্রার প্রিয় স্বামী,
‘নেই আর ওসবের দরকার;
ব’সছি আমি চেয়ারে,
বসো কোলের ওপরে,
মজা এবার শূলে চড়বার ।‘
Click Follow to receive emails when this author adds content on Bublish
Comment on this Bubble
Your comment and a link to this bubble will also appear in your Facebook feed.