মেয়ে লুট ক’রে বিয়ে
ডাঃ পরমেশ ঘোষ
আমার প্রিয় ঠাকুর্দা-ঠাকুমার ঘরে,
নিয়ে এলাম ইমরানকে হাত ধ’রে ।
‘এখানে থাকবে ইমরান এখন থেকে’,
বললাম আমি মিঠে হাসি নিয়ে মুখে,
তাকিয়ে মোর ঠাকুর্দা-ঠাকুমার দিকে ।
ঠাকুর্দা বললো, ‘এ তোর নতুন চালাকি?
নতুন মরদ এনে আমাকে দিবি ফাঁকি?
তোর ঠাকুমা আর তুই নাতনী;
আমার পেয়ারের এ-দুই গিন্নি;
হঠাৎ ইমরান এলো কেন শুনি?
নিয়ে যাবে বুঝি তোকে ছিনি?’
উত্তরে ঠাকুমার উজ্জ্বল হাসিমুখ,
‘বুড়ীকে নিয়েই মেটাও যত সুখ ।’
আমি বলি, ‘ঠাকুর্দা, আজকাল তো মজাই মজা;
ছেলেমেয়েদের মেলামেশা নিরাপদ আর সোজা ।‘
ঠাকুর্দা বলেন, ‘বলিস্ কী?
সাবধান হ’য়ে চলিস ঝিকি;
অবাধ-মিলন নেহাৎই রিস্কী..’
আমি বলি, ‘জানো তুমি ঘোড়ার ডিম;
বার ক’রে নিয়েছি যতো আমার ডিম;
জমা রেখেছি হাসপাতালের হিমঘরে;
বন্ধ্যা আমি যাই মন ভ’রে মজা ক’রে;
ইমরানও নির্বীজ আমার মতন;
ঠাণ্ডাঘরে তার যৌবনের সব ধন;
যদি কারুর সঙ্গে সন্তান আমি চাই,
বীজ আর ডিমের IVF মিলন ঘটাই।
তোমার ঔরসেও পেতে পারি মোদের IVF সন্তান,
যদি থাকে ইচ্ছে আমার আর তোমার অবদান ।‘
হাসিমুখ ঠাকুর্দা বললো নাড়িয়ে মাথা, ,
‘থামা ঝিকি, তোর যত জ্ঞানের কথা;
এবার তোমার কথা বলো, ইমরান –‘
‘২০৩০-এর মধ্যেই হবে অভিযান,’
দুচোখে স্বপ্ন নিয়ে বললো ইমরান,
‘জোর চলছে মঙ্গলগ্রহে যাওয়ার প্ল্যান,
বিজ্ঞানীদের চ’লছে গবেষণা,
ওখানে গিয়ে বাঁচা যাবে কিনা;
পাওয়া গেছে হদিশ জল আর নুনের;
সিওটু থেকে বানাবো অক্সিজেনের;
এই যাত্রায় মুসলিমদের নেই ঠাঁই,
পরিচয় তাই গোপন রাথতে চাই ।‘
এইটুকু ব’লে ইমরান ক’রলো ইতস্ততঃ;
আমি বললাম, ‘থাক্ না ওকথা আপাততঃ ।‘
ঠাকুর্দা বলেন, ‘বল্ না সোজা কথায়;
ইমরানকে ধ’রে লুটে এনেছিস হেথায় ।‘
বলি, ‘আনিনি লুটে হেথায়,
এসেছে ও নিজেরই ইচ্ছায়;
পেয়িং গেস্ট হবার অভিপ্রায় ।‘
‘আমাদের সময় খালি মেয়েরাই হোত লুট;’
ঠাকুর্দা বলেন, ‘এখন ছেলেরাও না পায় ছুট ।‘
শুরু করলেন ঠাকুর্দা জীবনের গল্প;
অনেকটাই সত্যি, হয়তো মিথ্যে অল্প ।
*** *** ***
‘আমাদের যুগ ছিল একান্তই পুরুষপ্রধান,
মেয়ে লুট ক’রে বিয়ে ছিল তখন বিধান;
পরস্পরকে দেখেশুনে ভালো না বেসে,
লোভ চেপে, ঠোঁট বেঁকিয়ে মৃদু হেসে,
ভালবাসার অভিনয় ক’রে এযুগের মতন,
বিয়ের প্রস্তাব ক’রতো না কেউ তখন ।
পাত্র-পাত্রীর আয়, রূপ, গুণ, বংশ-পরিচয় আর যৌতুকের ওজন,
ছেলেমেয়েদের বিয়ে দেবার জন্যে দেখতো না বাবা, মা, গুরুজন;
বিয়ের বয়স হওয়ার পর প্রতিটি তৈরী ছেলে,
সংসার খরচ চালানোর মোটামুটি সঙ্গতি হ’লে,
আসতো একটি মেয়েকে সুযোগমত লুটে নিয়ে;
লুটে আনা মেয়েটিকেই খুশী মনে ক’রতো বিয়ে;
লুটে আনা মেয়ের দায়িত্ব নিতো লুটেরা স্বামী,
মেয়ের বাবা-মার কাছে চাইতো না কিছু দামী ।
‘মেয়ে পরের ধন’, মেয়ে জন্মালেই বাবা-মা বলতো,
যতদিন কেউ লুটে না নেয়, ঘরের মধ্যে পালতো;
মেয়ে লুট করা যেহেতু বেআইনী বা বেইমানী নয়,
বাবা-মার চোখের সামনে মেয়ে অনায়াসে লুট হয়;
যদি কোন বিয়ের বয়সী ছেলে এসে জোর ক’রে,
বিয়ে ক’রবে ব’লে কন্যাকে সঙ্গে নিয়ে যায় ধ’রে,
লুটেরাটিকে কোনোভাবেই বাবা-মা বাধা না দেবে,
সসম্মানে তাকে প্রিয় জামাই হিসেবে মেনে নেবে ।
সে যুগের মেয়েরাও চলতো তখনকার ঐতিহ্য মেনে;
লুট হবার জন্যেই জন্ম একথা জানতো মনে প্রাণে;
ঠাকুরের কাছে প্রার্থনা ক’রতো প্রতিটি মেয়ে,
সুন্দর সুস্থ কেউ যেন যায় তাকে লুটে নিয়ে,
তার আগে বয়স যেন না যায় খুব বেশী হ’য়ে;
আরো ভালো হয়, পাড়ার জানাশোনা ছেলে হ’লে,
বাবা-মার কাছাকাছি আদরে থাকা যাবে তাহ’লে;
ছেলেরাও নজর রাখতো সুন্দরী স্বাস্থ্যবতীদের উপর,
বাইরের ছেলেদের ঢুকতে দিত না পাড়ার ভিতর।
আমি তখন ঝামাপুকুরের মাস্তান,
ক’রেছি শুরু খুলতে চোখ-কান;
মাসখানেক হ’লো জুটেছে একটা চাকরী;
ভাবলাম এইবার একটা মেয়ে লুট করি;
একটু পাতে নেবার মতো ছিল যে কয়েকটা মেয়ে,
পাড়ার দাদারা তুলেছে নিজেদের ঘরে লুটে নিয়ে;
আমাদের জন্য যে কয়েকটা মেয়ে আছে পড়ে,
কুৎসিৎ কদাকার তারা কেবলই ঝগড়া করে ।
তখন চড়কের মেলা বসেছে পদ্মপুকুরের ধারে;
ওখানে সব পাড়ার ছেলেমেয়েরাই যেতে পারে ।
কিরীটি আমার নাম, অর্থাৎ অর্জ্জুন
পাণ্ডব গাণ্ডীবের মতোই রণে নিপুণ;
আমার সাকরেদ দুই বন্ধু, পাড়ার ছেলে –
মোহিত আর শ্যামলকে ফেললাম ব’লে,
‘চল, তিনজনে চড়কের মেলা থেকে,
তুলে নিয়ে আসি সুন্দরী তিন মেয়েকে;
ভবানীপুরের মেয়েদের দেখে লাগে বড় লোভ,
কিন্তু কাছে ঘেঁসতে দেয় না ওখানকার লোক;
এছাড়া অন্য পাড়ার মেয়েদেরও দেখা পাবো ।
তিনজনে মিলে শিকারসমূহ কব্জা ক’রবো ।‘
মোহিত একটু ভালো মানুষ; ভয়ে ভয়ে বোললো –
‘দ্যাখ, ঠ্যাঙানি দিতে পারে ওখানের ছেলেগুলো;
এছাড়া পুরোপুরি তিনটে মেয়ে যদি না পাই;
কীরকম ক’রে তখন বাঁটোয়ারা হবে ভাই?’
আমি বললাম, ‘মোহিত, নিশ্চিন্তে থাকিস ।
পাই যদি একটা মেয়ে, তুই নিয়ে নিস্ ।
আমরা আবার যাবো অন্য কোনো দিনে;
বিয়ে ক’রবো ভাগ্যমতো মেয়ে লুটে এনে ।
তবে প্রথম দিনে গোটা তিনটে মেয়ে পেলে
যে যার নিজের শিকার ঘরে নেবে তুলে ।‘
শুক্কুরবারে আমরা তিনজনে নিজের নিজের অফিস থেকে দুপুরবেলায়,
হাফছুটি নিয়ে বারোটা নাগাদ এসে প’ড়লাম পদ্মপুকুরের চড়কমেলায় ।
একটা দোকানে বসে খেলাম আমরা চা আর পাঁউরুটি;
ঠিক করলাম শিকার দেখলে কেউ একা যাবোনা ছুটি;
পরস্পরকে শিস্ দিয়ে, জানাতে যেন না হয় ত্রুটি;
পেছন থেকে শিকারের উপর ঝাঁপিয়ে ধরবো ঝুঁটি ।
কীরকম মেয়ে হবে মনের মতো ভালো,
একথা নিয়ে বার বার আলোচনা হোলো;
এখানেও আর একবার কথা ক’রলাম শুরু –
চাই ইংরেজীর আট – অর্থাৎ কোমর সরু;
কোনোমতেই নয় শুকনো ম্যানচেস্টার,
নরম গোল দুটো চাই হ্যান্ডবল খেলার ।
ঝুলে যদি থাকে পেছনটা এবং বেশ বড়,
অন্দরমহলের গর্ত্তটা হয় তৃষ্ণায় গভীরতর ।
এই সময়েই এক ক্ষীণতন্বী, পীনোন্নত পয়োধরা
তিন শিকারীর সতৃষ্ণ চোখে হঠাৎ পড়লো ধরা ।
মেয়েটির প্রতিটি অঙ্গ আমাদের প্রত্যেকের নজর কাড়লো;
মাল জরিপ করার জন্যে তিনটে মুণ্ডু একই সঙ্গে ঘুরলো…
চা আর পাঁউরুটি শেষ ক’রে আমরা মেলায় ঝাঁপ দিলাম ।
একশো গজ হাঁটার পরেই চোখের সামনে শিকার পেলাম;
পড়বি তো পড় – পড়ে পাওয়া চোদ্দ আনা –
ঐদিকটায় কারুর নেই কোনো আনাগোণা;
পনের-ষোলো বছরের তিনটে মেয়ে, এক্কেবারে টাটকা তাজা;
দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে, খাচ্ছে ফুলুরী বা বেগুনী তেলেভাজা, –
শিকারগুলোর পেছনফেরা আমাদের দিকে;
ওয়ান-টু-থ্রি – লঙ্গজাম্প একসাথে তীরবেগে -
কোন কথা নয় – একসঙ্গে, এক মুহূর্ত্তে, এক পলে
জাপটে ধরলাম তিনটি মেয়েকে আমরা তিনটি ছেলে;
তিনটি মেয়েই নিঃস্তব্ধ, বন্ধ হোল নড়া-চড়া,
মুখ খোলার নেই উপায়, তেলেভাজা-পোরা ।
তিন শিকারী ছেলেই প্যাডলক বা তালা নিয়ে তৈরী ছিলাম ।
প্রতি মেয়ের দুহাতের বালা টেপা তালা দিয়ে জুড়ে দিলাম ।
এক একটা মেয়েকে দুই হাতে শেকল বেঁধে,
আমরা তিনটি ছেলে, নিলাম তুলে তিন কাঁধে ।
ষোলো বছরের সুন্দরী আমার কাঁধে - সালোয়ার কামিজ পরা,
ভারী হলেও নরম বুকজোড়া ক’রলো মোরে পাগল, দিশেহারা ।
বগলের তলায় হাত দিয়ে ধ’রে, ওকে দাঁড় করালাম মাটির উপরে;
শ্রাবস্তীর কারুকার্য্য ওর মুখ জুড়ে; অনেক চুমু খেলাম ঝুঁকে পড়ে –
মুখে, গালে, মাথায়,- কানে, ঠোঁটে, প্রতিকণায় –
ওর জিভের তাপ নিলাম আমার জিভের ডগায় ।
শুরু ক’রেছে লোক আসতে মেলায়;
পাঁচ পঞ্চাশ জনের সামনে হেথায়,
চলবে না বুঁদ হ’য়ে থাকলে নেশায় –
নিজের মাথায় গাঁট্টা মারলাম, হ’লো তখন খেয়াল;
যে কেউ এসে কেড়ে নিতে পারে এমন মহার্ঘ মাল ।
ওকে তুলে ছুঁড়ে ফেললাম আমার বাঁ কাঁধে;
নজরে পড়লো ও রেখেছে দুপায়ে ঘুঙুর বেঁধে,
চকিতে প্যাডলক বেরোলো পকেট থেকে;
দুটো ঘুঙুর এক ক’রে দিলাম তালা টিপে ।
মালটাকে কাঁধ থেকে নামানো যাবে এখন ভারী লাগলে;
দৌড়ে পালাবে না কয়েদী, তার হাত পা বাঁধা শেকলে;
যেতে হবে মেয়েটাকে এখন বাড়ী নিয়ে,
অন্য শিকারীদের লোভ থেকে বাঁচিয়ে ।
একটু হেঁটেই রিক্সা-স্ট্যান্ড; মোহিত-শ্যামল জানিনা কোথায় কোন্ দিকে;
ওদের জন্যে দাঁড়াতে গেলে অন্য কোনো শিকারীর নজর পড়বে এদিকে ।
রিক্সায় তুলে বললাম মালটাকে, ‘একটু বাঁদিকে বসো দেখি মেড়ে,
এদিক দিয়ে চড়বো আমি।‘ রিক্সায় উঠে বললাম, ‘চলো তেড়ে।‘
মালটা কিছু বলতে করছিল চেষ্টা; চেপে ধ’রলাম ওর ঠোঁটটা;
বেঁধে দিলাম ওর মুখ জম্বেশ ক’রে, নিয়ে ওর ভারী দোপাট্টা,
যাতে ও কেবল কোনোমতে শ্বাস নিয়ে বাঁচতে পারে।
কোনো আওয়াজ বেরোবে না মুখ থেকে একেবারে।
এরকম লুটের মাল অনেকেই নিয়ে যায় রিক্সো ক’রে;
রিক্সোওয়ালারা সাধারণতঃ কোনো আপত্তি না করে;
শুধু বললো, ‘যাচ্ছো এরকম মেমসাহেব নিয়ে,
বখশিস দাও আমাকে তিনগুণ ভাড়া দিয়ে ।‘
আমি বললাম, ‘চলো না ভাই,
যা ভাড়া চাইবি দেবো তাই ।‘
‘বাবু বলো তুমি যাবে কোথায়?’
‘ঝামাপুকুর; চল না দ্রুত সেথায়’
‘যাবো না; বাবু; ট্রামলাইন পর্য্যন্ত যেতে পারি;
ওখান থেকে বাস-ট্রাম-ট্যাক্সি ধ’রে দিন পাড়ি ।‘
‘চল্ ঝামাপুকুর; নইলে মাথা ফাটাবো;
তোর ব্যবসার পুরো বারোটা বাজাবো ।‘
অগত্যা হাঁটা-দৌড় শুরু করে রিক্সোওলা:
দোপাট্টার ফাঁক দিয়ে চেষ্টা ওর কথা বলা।
Click Follow to receive emails when this author adds content on Bublish
Comment on this Bubble
Your comment and a link to this bubble will also appear in your Facebook feed.